Sunday, November 29, 2015

রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় চাই সরকারের আন্তরিকতা

সৈয়দ ইবনে রহমত : 
রাঙ্গামাটিতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নিয়ে সরকার তা দশ বছরেও বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এটা খুবই দুঃখজনক। আরো অবাক করার বিষয় হচ্ছে যে কিছু পাহাড়ি নেতার বিরোধীতার কারণে বারবার আটকে যাচ্ছে এ প্রকল্পের কাজ। শুধু রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেই যে বাধা আসছে তাই নয়, এ অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে পাহাড়ি নেতাদের বাধা দেয়াটা বৃটিশ আমল থেকেই রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি সহজে অনুধাবনের জন্য কিছু বিষয় আলোকপাত করা প্রয়োজন।

রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত : নির্বাচনে জয় লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন ও উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এসব পদক্ষেপের একটি ছিল, দেশের পুরাতন জেলা সদরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হিসেবে পরিচিত ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার উদ্যোগ। এর মধ্যে রাঙ্গামাটি কলেজও ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সঙ্গত কারণেই এ পরিকল্পনা ত্যাগ করে রাঙ্গামাটিতে একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে মোতাবেক ‘রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০১’ পাশ করে রাঙ্গামাটি শহরের দক্ষিণে ১০৪ নং জগরাবিল মৌজায় জায়গা নির্বাচন করা হয়। একই সাথে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেকান্দর খানকে প্রজেক্ট ডাইরেক্টর এবং রাঙ্গামাটি সরকারী কলেজ থেকে এলপিআর-এ যাওয়া প্রিন্সিপাল প্রফেসর হারুনুর রশিদকে অনারারি রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেয়া হয়। রাঙ্গামাটি শহরের রাজবাড়ি এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে তারা দু’বছর অফিসও করেন। কিন্তু ক্ষমতার হাত বদলের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানের অধিবাসীদের এক স্মারকলিপির অজুহাত দেখিয়ে ২০০৪ সালে প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের ২৯ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো ক্ষমতায় এসে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এর প্রেক্ষিতে জগরাবিল এলাকার অধিবাসীরা উক্ত এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না করার জন্য ২০০৯ সালের ১১ মে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ করে। বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একই বছরের ৫ জুলাই ঢাকায় একটি মিটিং আহ্বান করেন। উক্ত মিটিং-এ পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন নেই জানিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি কলেজে অধিক সংখ্যক বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু, পার্বত্যাঞ্চলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের দাবি জানান। একই বিষয়ে তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে রাঙ্গামাটিতে এসে স্থানীয় জনগণের মতামত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। ২৭ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম কুমার চাকমার নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রীর সাথে দেখা করে আবারো রাঙ্গামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন নেই জানিয়ে পার্বত্যাঞ্চলের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ভোকেশনাল, মাতৃভাষায় শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব পেশ করেন। ১ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে আবারো জগরাবিল এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়। এসবের প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি মন্ত্রী দীপংকর তালুকদারকে সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি রাঙ্গামাটি টাউন হলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মতামত গ্রহণের জন্য এক সভায় মিলিত হন। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির কারণ দেখিয়ে উক্ত সভায় আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা নিজে উপস্থিত না থেকে আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম কুমার চাকমাকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান। পরবর্তীতে ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করে জগরাবিল এলাকার অধিবাসীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আরো একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আপত্তির কারণ : রাঙ্গামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বাধা দেয়ার পেছনে আসলে কি উ্েদ্দশ্য রয়েছে তার সবকিছু হয়ত জানা যাবে না। তবে এখন পর্যন্ত কতিপয় পাহাড়ি নেতার বক্তব্য ও বিবৃতি থেকে চারটি কারণ স্পষ্ট হয়েছে। প্রথমত: রাঙ্গামাটির যে এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হবে সে এলাকার পাহাড়িরা উচ্ছেদের শিকার হবেন। এরা অতীতে কাপ্তাই বাঁধের ফলে একবার উচ্ছেদ হয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত: বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর পাহাড়িদের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। ছাত্র, শিক্ষক কর্মচারীর সবাই নাহলেও অন্ততঃ বেশিরভাগই হবেন বহিরাগত। তৃতীয়ত: নিরাপত্তার অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশ, সেনা ক্যাম্প স্থাপিত হবে। প্রতিষ্ঠা পাবে ব্যাংক, বাজারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যাতে বাঙালিদের প্রাধান্য থাকবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত হবে। চতুর্থত: বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বাঙালির সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কলুষিত হবে পাহাড়িদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি।

এসব সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)’র নেতৃবৃন্দ মনে করেন এই মুহুর্তে পার্বত্যাঞ্চলে কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন নেই। তাই রাঙ্গামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উপরোক্ত সমস্যা সমুহ সৃষ্টি না করে পার্বত্যবাসীর শিক্ষার মান উন্নয়নে জেএসএস নেতৃবৃন্দের বিকল্প প্রস্তাব হলো, পাবর্ত্যাঞ্চলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন, পাহাড়িদের মাতৃভাষায় শিক্ষা চালু এবং তিন পার্বত্য জেলা সদরে বিদ্যমান তিনটি কলেজে অধিক সংখ্যক বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু ও আবাসিক সুবিধা বাড়ানো।

যুগে যুগে পার্বত্যাঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে বাধা : পার্বত্যাঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে বাধা দেয়াটা নতুন কোন ঘটনা নয়। বৃটিশ আমল থেকেই সরকারগুলো ধারাবাহিকভাবে এ বাধার সন্মুখীন হয়ে এসেছে। প্রথম দিকে বৃটিশরা তাদের শাসন কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে কিছুসংখ্যক পাহাড়িকে শিক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়ে বাধার মুখে পড়ে। ফলে তারা এটা শুধু মাত্র অভিজাত পাহাড়িদের মধ্য সীমাবদ্ধ রাখতে বাধ্য হয়। আজকে অনেক পাহাড়ি নেতাকে মাতৃভাষায় শিক্ষা চালুর দাবী নিয়ে আন্দোলন করতে দেখা যায়। অথচ ইতিহাসের চরম সত্য হলো বৃটিশরা পাহাড়ে মাতৃভাষায় শিক্ষা দান চালু করেও এই পাহাড়ি নেতাদের আন্দোলনের কারণেই তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। ১৮৬৩ সালে চন্দ্রঘোনায় প্রতিষ্ঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে বাংলা, ইংরেজী ছাড়াও চাকমাদের জন্য চাকমা ভাষা এবং মার্মাদের জন্য বার্মিজ ভাষায় শিক্ষা চালু ছিল। মাঝখানে এ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১৯৩৭-৩৮ সালে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা বিভাগের ডাইরেক্টর এবং রাঙ্গামাটি সরকারি হাই স্কুলের হেড মাস্টার হারবার্ট ফ্রেডারিক মিলার বাংলা, ইংরেজীর পাশাপাশি আবারো চাকমাদের জন্য চাকমা ভাষা এবং মার্মাদের জন্য বার্মিজ ভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেন। কিন্তু তখনকার চাকমা নেতা কামিনী মোহন দেওয়ান এবং অন্যান্যরা এতে আপত্তি করেন। তারা চাননি চাকমা ছেলে-মেয়েরা চাকমা ভাষা শিখুক। ফলে পাহাড়িদের মাতৃভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগটি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। কামিনী মোহন দেওয়ান তার আত্মজীবনী ‘পার্বত্য চট্টলের এক দীন সেবকের কাহিনী’তে পাহাড়িদের মাতৃভাষায় শিক্ষার উদ্যোগের সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘মিলার বদ উদ্দেশ্যে চাকমা ভাষা ও বার্মিজ ভাষা চালু করেছিল’। রাঙ্গামাটি হাই স্কুল, সাধারণ পাহাড়িদের শিক্ষিত করার ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি বরং বর্তমান চাকমা সার্কেল চীফের পূর্ব পুরুষ ভূবন মোহন রায়কে শিক্ষিত করার জন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৮৯০ সালে গড়ে তোলা হয়েছিল। পাকিস্তান আমলে, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাঙ্গামাটি কলেজ। কিন্তু এটি স্থাপনও সহজ কাজ ছিল না। কারণ তৎকালীন চাকমা সার্কেল চীফ ত্রিদিব রায় রাঙ্গামাটিতে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছিলেন। তিনি শুধু বিরোধীতা করেই ক্ষান্ত হননি বরং এটি যাতে কোনভাবেই বাস্তবায়িত হতে না পারে সে চেষ্টাও করেছিলেন। এর জন্য তিনি প্রথমে ঢাকার রাজস্ব বোর্ডের সদস্য এস এম হাসানের কাছে এবং পরবর্তীতে তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার করিম ইকবালের কাছে চিঠি লিখে রাঙ্গামাটিতে কলেজ স্থাপনের প্রয়োজন না থাকা সত্বেও তার জমি (যদিও জায়গাটি চীফের জন্য নির্ধারিত ৭৫ একর জমির মধ্যে ছিল না) জোর করে নিয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার সিদ্দিকুর রহমানের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত কলেজটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এসব তথ্য তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বন্দোবস্ত ও প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা শরদিন্দু শেখর চাকমা তার ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ও আমার জীবন’ শীর্ষক বইয়ে লিখে রেখেছেন। একই বইয়ে তিনি নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতাসহ সাধারণ পাহাড়িদের শিক্ষার ব্যাপারে অভিজাত শ্রেণীর বাধা দেয়ার আরো বেশ কিছু উদাহরণ তোলে ধরেছেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বর্তমান আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার পূর্বপুরুষের ঘটনা। শরদিন্দু শেখর চাকমার ভাষায় ঘটনাটি হলো, ‘সন্তু লারমার বাবার বড় ভাই কৃষ্ণ কিশোর চাকমা যখন বি, এ, পড়ছিলেন তখন তার বইগুলো চুরি করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, যাতে তিনি বি, এ, পাশ করতে না পারেন। এটা করা হয়েছিল কিছু উচ্চ বর্ণের দেওয়ান/তালুকদারের ষড়যন্ত্রের ফলে। তখন দেওয়ান তালুকদারগণ চাইত না সাধারণ চাকমারা লেখাপড়া শিখুক। কারণ সাধারণ চাকমারা লেখাপড়া শিখলে তাদের আর আগের মত মান্য করবে না। তাই সাধারণ পরিবারের সন্তান কৃষ্ণ কিশোর স্কুল সাব ইন্সপেক্টর হওয়ার পরে সাধারণ চাকমাদের মধ্যে ব্যাপকহারে শিক্ষা বিস্তারে আগ্রহান্বিত হন।’

বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে যৌক্তিকতা : দেশে ইতোমধ্যে ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। আয়তনের দিক থেকে বিবেচনা করলে এতদিন দেশের এক দশমাংশ জুড়ে বিস্তৃত পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্তত ৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার কথা ছিল। অথচ আজ পর্যন্ত এ অঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও স্থাপিত হয়নি। এটা একদিকে পার্বত্যবাসীর দুর্ভাগ্য অন্যদিকে রাষ্ট্রের জন্য ব্যর্থতারও পরিচায়ক। তাছাড়া যেসব যুক্তি দেখিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করা হচ্ছে তা রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে খুব গুরুত্ব পাওয়ার কথা নয়। কারণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেখানে হাজার হাজার পরিবারকে উচ্ছেদ করে জনগণের কল্যাণে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করতে পারে সেখানে রাঙ্গামাটিতে মাত্র পঞ্চাশ থেকে একশ’টি পরিবারকে উচ্ছেদ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না, এটা খুবই হাস্যকর বিষয়। বিরোধীতাকারীদের আরেকটা যুক্তি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে ছাত্র-শিক্ষকসহ স্টাফদের মধ্যে অনেকেই বাঙ্গালী হবেন, এতে পাহাড়িদের সামাজিক-রাজনৈতিক সংস্কৃতি কলূষিত হবে। এ যুক্তিটাও ধোপে টেকে না। কারণ পাহাড়িরা যেমন এদেশের নাগরিক তেমনি বাঙ্গালীরাও এ দেশের নাগরিক। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সমান সুযোগ লাভের অধিকার সকলেরই আছে। তাছাড়া সমতলের হাজার হাজার বাঙ্গালী পরিবার উচ্ছেদ করে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোটার সুযোগ নিয়ে পাহাড়ি ছেলে-মেয়েরা পড়া লেখা করতে পারলে এবং তাতে যদি বাঙ্গালীদের সাথে মিশে পাহাড়িদের সংস্কৃতি কলূষিত না হয় তাহলে পার্বত্যাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙ্গালী থাকলে পাহাড়িদের সংস্কৃতি নষ্ট হওয়ার যুক্তি আসবে কেন? নিরাপত্বা বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন নিয়ে আশংকা করাও অমূলক। কারণ বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই নিরাপত্বার প্রয়োজনে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রয়োজন হয়। এখানেও থাকবে, তাই এটাকে নেগেটিভ দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে কলেজে অনার্স কোর্স বাড়িয়ে উচ্চ শিক্ষার চাহিদা মেটানেরা কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু একটা নদীকে খনন করে গভীরতা বৃদ্ধি করলেই যেমন সেটা সাগর হয়ে যায় না। তেমনি একটা কলেজে অনার্স কোর্স চালু করলেই তা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যেতে পারে না। কোন শিক্ষিত মানুষের পক্ষে আসলে এটা ভাবা খুবই হাস্যকর। কেননা কলেজ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা পূরণ হলে দেশে শত শত কলেজ থাকা সত্বেও সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যায় করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হতো না। এ অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় না থাকা পার্বত্যবাসীর উচ্চ শিক্ষা লাভে প্রধান অন্তরায়। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপজাতীয় কোটা আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কোটার সুযোগ নিয়ে প্রতি বছর এক হাজারের বেশি উপজাতীয় ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হতে পারছে। কিন্তু এ সুযোগ স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়েরা ব্যবহার করতে পারলেও দরিদ্রদের কোন কাজে আসছে না। কতিপয় পাহাড়ি নেতা রাঙ্গামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বিরোধীতা করে এ কোটার সংখ্যা আরো বাড়িয়ে পার্বত্যবাসীর উচ্চ শিক্ষায় বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের দাবী করছেন। অথচ এসব কোটা চালু আছে সেই আশির দশক থেকেই। কিন্তু এই কোটা সুবিধা উচ্চ বর্ণের কিছু পাড়িদের হাতেই কুক্ষিগত। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে বসবাসকারী কোন সাধারণ পাহাড়ির সন্তানের পক্ষে যোগ্যতা থাকা সত্বেও খুলনা কিংবা রাজশাহী গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সম্ভব হয় না। ফলে এসব কোটা শহুরে অভিজাত শ্রেণীর দখলেই থেকে যায়। তাই সাজেক, বরকল, বিলাইছড়ি, জুড়াছড়ি, লামা, আলীকদমের মত পার্বত্যচট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে বসবাসকারী খেটে খাওয়া পাহাড়িদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষিত নাই বললেই চলে। রাঙ্গামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে অভিজাতদের পাশাপাশি এতদিন অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যারা বঞ্চিত হচ্ছিল তারাও উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ পাবে। আর দরিদ্রদের জন্য এ সুযোগ সৃষ্টি করাটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাছাড়া আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা রাঙ্গামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধীতা করলেও তার সংগঠন জেএসএস-এর অনেক নেতাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে। তারা এই মুহুর্তে সন্তু লারমার ভয়ে সরাসরি মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। তবে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে নাম প্রকাশ না করে তারা এব্যাপারে সন্তু লারমার সমালোচনা করেছেন। তাদের কেউ কেউ এ আশংকাও করছেন যে, জেএসএস-এর পক্ষ থেকে রাঙ্গামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বাধা দান পার্বত্য চট্টগ্রামের ভবিষ্যত ইতিহাসে একটি কলঙ্ক হিসেবেই চিিহ্নত হবে।

সন্তু লারমাকে ভাবতে হবে : সন্তু লারমাকে ভাবতে হবে যে শুধু বিরোধীতার কারণেই বিরোধীতা সব ক্ষেত্রে শুভ ফল দেয় না। তাছাড়া পার্বত্যচট্টগ্রামে এ পর্যন্ত যারাই শিক্ষা বিস্তারে বিরোধীতা করেছে ইতিহাসে তাদের স্থান সম্মাজনক হয়নি। তাই আজকে যারা বিরোধীতা করবে ভবিষ্যৎ ইতিহাসও তাদের পক্ষে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। আরো কিছু বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবী রাখে, যে পার্বত্যাঞ্চলে শুধু জেএসএস নয় এখানে আছে ইউপিডিএফ, জেএসএস (এমএন লারমা) গ্রুপ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং সমঅধিকার আন্দোলনসহ আরো অনেক রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন। এদের সবাই কিন্তু পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে। তাছাড়া তার নিজের দলেরও অনেক নেতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে। তাই পার্বত্যাঞ্চলের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মতের বিরুদ্ধে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান তৈরির সিদ্ধান্ত খুব বেশি দিন আটকে রাখা যাবে না। তাছাড়া সরকার ইতোমধ্যে দেশের প্রত্যেক জেলা সদরে অন্তত একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই সরকারের নীতি কিংবা জনগণের দাবীর মুখে পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ নাহোক কাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। আর সন্তু লারমার বিরোধীতা সত্বেও পার্বত্যাঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীরাই তাকে ঘৃণার চোখে দেখবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর সন্তু লারমার এই কলঙ্ক পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষানুরাগী তার পূর্ব পুরুষ কৃষ্ণ কিশোর চাকমার মহান অবদানকেও কালিমা লিপ্ত করবে। তাই সন্তু লারমাকেই এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরাকারকে সয়হায়তা করে পূর্ব পুরুষদের অবদানের স্বীকৃতি দিবেন নাকি বিরোধীতা অব্যাহত রেখে ইতিহাসকে কলঙ্কিত করবেন?

সরকারকে ভাবতে হবে : পার্বত্যাঞ্চলে ইতিপূর্বে গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করতে গিয়ে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা নানা অনিয়ম করেছেন। আর এর জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে এখানকার জনগণকে। যার ফলে আজ তারা সরকারের যে কোন উদ্যোগকেই সন্দেহের চোখে দেখে। এমনকি একই কারণে তারা আজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মত মহতি উদ্যোগেরও বিরোধীতা করছে। তাই এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে জনমত গঠন করা আবশ্যক। একই সাথে যেকোন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য যথাযথ পুনর্বাসনের রূপরেখা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই পার্বত্যবাসীর আস্থা অর্জন করা সম্ভব। স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রত্যেকটি জেলায় অন্তত একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার বাস্তবায়ন শুরু হতে পারে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকেই। তাই এখন শুধু রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কালক্ষেপণ না করে রাঙ্গামাটির পাশাপাশি বান্দরবান এবং খাগড়াছড়িতে এক যুগে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। আর তা বাস্তবায়ন করতে হবে বর্তমান সরকারের আমলেই। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা বলে এক সরকারের আমলে গৃহীত প্রকল্প অন্য সরকারের আমলে কখনোই গুরুত্ব পায় না। তাই প্রয়োজনে অস্থায়ী ক্যাম্পাস খুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক ও পাঠ দান শুরু করতে হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম একবার শুরু হয়ে গেলে ক্রমান্বয়ে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা কঠিন হবে না।

রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশিত স্বরূপ : বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা ভাবা হচ্ছে। একুশ শতকের এ যুগে বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু পার্বত্যাঞ্চলের অবস্থান, এখানকার ভূ-প্রকৃতি, বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত জীবন ধারা বিবেচনা করলে রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিজ্ঞানের নির্দিষ্টি কিছু বিষয় শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। বরং এখানকার বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও জীবন ধারা নিয়ে গবেষণার জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান ও নৃ-বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা সুযোগ সৃষ্টির দাবী রাখে। প্রয়োজনে উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে নিয়ে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে। পার্বত্যাঞ্চল হাজারো প্রজাতির বন্য প্রাণী এবং উদ্ভিদে পরিপূর্ণ। তাই এখানকার প্রাণী এবং উদ্ভিদের প্রজাতিগুলোকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশকে টিকিয়ে রাখতে হলেও পর্যাপ্ত গবেষণার প্রয়োজন আছে। তাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণী বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান এবং ফরেস্ট্রি বিষয় থাকাও জরুরী। পার্বত্যাঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ইতোমধ্যো দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্প দিন দিন বিকশিত হচ্ছে। এ শিল্পকে বিশ্বমানে উন্নিত করতে হলে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চ শিক্ষিত পর্যাপ্ত জনবল। আর পর্যটন শিল্পের প্রয়োজনে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়সহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহুল ব্যবহৃত ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। সম্ভাব্য অন্যান্য চাহিদার কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহ চালুর কথাও ভাবা যেতে পারে। আর এটা করা সম্ভব হলে রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পার্বত্যবাসীর কল্যাণেই কাজে লাগবে তা নয় বরং এটা হয়ে ওঠবে আমাদের জাতীয় সম্পদ। তবে সব কিছু একই সাথে করতে হবে তারও কোন যুক্তি নেই। বরং পরিকল্পনা রেখে কাজ শুরু করা গেলে পর্যায়ক্রমে সব কিছুই বাস্তবায়ন করা যাবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় একশ্রেণীর নেতাদের কাছ থেকে সবসময়ই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। আর এসব প্রতিবন্ধকতা তৈরির পেছনে যে ভাল কোন উদ্দেশ্য কখনো ছিল না ইতিহাসই তার প্রমাণ। তাই রাঙ্গামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বাধা আসবে, এটাই স্বাভাবিক। আর এ বাধা প্রদানও যে পার্বত্যবাসীর কল্যাণে নয় তাও স্পষ্ট। তাই এসব বিরোধীতার জন্য রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত স্থগিত কিংবা বাতিল করে সাধারণ মানুষকে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কারও নেই। তাছাড়া আরো একটি বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবী রাখে। সেটা হলো ইতোপূর্বের সরকারগুলো এসব বাধা টপকে পার্বত্যাঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিল বলেই আজ পার্বত্যাঞ্চলের মানুষ কিছুটা হলেও শিক্ষার আলো পেয়েছে। একইভাবে বর্তমান সরকারকেও উদ্যোগী হয়ে রাঙ্গামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ দ্রুত শুরু করতে হবে। আর যথাযথ এবং আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নিতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সন্তু লারমার কাছ থেকেও সহায়তা পাওয়া সম্ভব। কারণ আজকের এই যুগে শিক্ষা বিস্তারে কোন শিক্ষিত মানুষ বাধা হয়ে থাকতে পারেন না। সন্তু লারমাও একজন শিক্ষিত মানুষ, তাই সরকার আন্তরিক হলে তিনিও সকল মান অভিমান ভুলে শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবেন। এটাই স্বাভাবিক।

সূত্র : লেখাটি দৈনিক ইনকিলাবে ১০ই জানুয়ারি, ২০১১ইং প্রকাশিত 

No comments:

Post a Comment