রতন বড়ুয়া :
পার্বত্য
চট্টগ্রামে নতুন ফ্যাশন চালু হয়েছে। অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী গ্রেফতার হওয়ার পরও তার
পক্ষে মিছিল, মিটিং, সভা সমাবেশ করে তাকে নির্দোষ দাবী করা। এটুকু হলেও কিছুটা
মনের বুঝ দেয়া যেতো কিন্তু উলটো তারা নিরাপত্তাবাহিনীর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে।
বলা হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীরা নাকি তাদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে মিথ্যা নাটক
সাজিয়ে গ্রেফতার করছে। ভালো তো- ভালো না?
নিরাপত্তা
বাহিনীর সদস্যদেরকে বলছি-
আপনারা কেন এই সব ভদ্র লোকদের পিছনে নাটক সিনেমায়
নেমেছেন? এর চেয়ে ঢালিউডে গিয়ে সিনেমা নাটক বানালেই পারেন। বিভিন্ন সময়ে আপনারা উপজাতি ভদ্রলোকদের কাছ
থেকে এম কে-১১, জার্মানির তৈরি এইচ কে-৩৩, রাশিয়ার জি-৩, একে-৪৭, একে-২২, এম-১৬ রাইফেল, নাইন এমএম পিস্তল, চায়নিজ সাব মেশিনগান, এসবিবিএল বন্দুক এসব বিদেশী অত্যাধুনিক
অস্ত্র উদ্ধার করছেন। আপনাদের অভিযানে এ ধরনের বেশ কিছু অস্ত্র ধরা পড়েছে।
খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম পাহাড় আর
গভীর অরণ্যে চলছে আপনাদের নিয়মিত অভিযান। কিন্তু কেন? আপনারা এইগুলি না করে তো
দিব্বি আরাম আয়েশে দিন কাটাতে পারেন। কাদের সুখের জন্য এইগুলি করছেন? দেশের এক
দশমাংশ নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতি ভদ্রলোকগুলো আলাদা রাষ্ট্র বানাতে
চাচ্ছে। তারা সেখানে পূর্ণ-স্বায়ত্তশাসন চাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস
বর্জন করছে। এগুলো তারা করতেই পারে! কারণ তারা অতি
নিরীহ, নিপাট ভদ্রলোক।
তাদের এই চাওয়াতে দোষণীয় কিছু নেই। সরকার আপনাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাঠিয়েছে
আপনারা সেখানে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকুন। ভদ্রলোকগুলোকে অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি করতে
দিন। আলাদা জুম্মরাষ্ট্র বানাতে চাচ্ছে সেটাও বানাতে দিন। এটাই
তো তারা চায়! অবাক করার মতো ঘটনা হলো, আমাদের দেশের সুশীল নামের এক শ্রেণির
জ্ঞানপাপী আছেন তারাও এটাকে সমর্থন করেন। তথাকথিত সুশীলরা পাহাড়ের এসব
সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেন, উসকানি দেন।
সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুপার
জ্যোতি চাকমাকে বিদেশী পিস্তল ও গুলিসহ আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। ভদ্রলোক নাকি
নিরপরাধী। তাহলে প্রশ্ন আসে উনার বাসায় অস্ত্র ও গুলি এলো কোথা থেকে? উনি একজন উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান তাই উনার কাছে লাইসেন্সবিহীন
কিছু অস্ত্র থাকতেই পারে! তাই বলে গ্রেফতার করতে হবে?!!!
সুপার জ্যোতি চাকমাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য
ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার হুমকি দেওয়া
হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় দুল্যাতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ত্রিলন চাকমা
স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেসবার্তায় সুপার জ্যোতি চাকমাকে মুক্তি না দিলে
মঙ্গলবার সকাল থেকে এ কর্মসূচী চলবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে সুপার জ্যোতি চাকমাকে আটকের খবর পেয়ে উপজাতীয় জনপ্রতিনিধি
পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ জড়ো হয় থানার সামনে। পরে উপজেলা
পরিষদ মাঠে এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভা করে কর্মসূচি ঘোষণা করে। ঘটনার পর অর্ধ দিবস
সড়ক অবরোধ, স্কুল কলেজের ক্লাস বর্জন ও বই বিতরণ কার্যক্রম বর্জন করা হয় বলেও
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
সুপার জ্যোতি চাকমাকে আটকের প্রতিবাদে সোমবার দুপুর ৩টায়
খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সামনে জেলার উপজেলা ও ইউনিয়নের নির্বাচিত
চেয়ারম্যান, মেম্বারগণ এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। পেরাছড়া ইউপি মেম্বার সোনামনি চাকমার
সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি
চাকমা, পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, দিঘীনালা উপজেলা
চেয়ারম্যান নবকোমল চাকমা, মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা, পেড়াছড়া ইউপি
চেয়ারম্যান পরিমল ত্রিপুরা। একজন অস্ত্রধারী ব্যাক্তিকে আইনের আওতায় আনার
প্রতিবাদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়েও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি
চাকমা, পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, দিঘীনালা উপজেলা
চেয়ারম্যান নবকোমল চাকমা, মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা, পেড়াছড়া ইউপি
চেয়ারম্যান পরিমল ত্রিপুরা যে সমাবেশ করলেন তা সত্যিই
নজিরবিহীন এবং ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আসলে সব রসুনের কোয়া এক।
উল্লেখ্য রবিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে
উপজেলা চেয়ারম্যানের সরকারি বাস ভবনে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে বিদেশী একটি ফাইভ
স্টার পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলি ও ১টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ অস্ত্র আইনে
মামলা রেকর্ড করে আদালতে প্রেরণ করলে ম্যাজিস্ট্রেট জামিন নামঞ্জুর করে সুপার
জ্যোতি চাকমাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
১৯৯৭ সালে যখন শান্তি চুক্তি হয় ইউপিডিএফ তখন শান্তি চুক্তি মানে নাই।
শান্তি চুক্তির পরে পার্বত্য চট্টগ্রামে যখন শান্তি ও উন্নয়নের ধারা বেগবান হয়েছে
কিন্তু পদে পদে তারা বাঁধার সৃষ্টি করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত মিথ্যাচারের
মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছে। নিরাপত্তা বাহিনী তাদের নিকট
থেকে প্রায়ই অস্ত্র উদ্ধার করছে। তাই এ কথা চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায় যে, এদের কাছে প্রচুর পরিমাণে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে।
সুপার জ্যোতি চাকমা’র কাছ থেকে অস্ত্র মাত্র একটি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এরকম
হাজারো অস্ত্র আছে শান্তিচুক্তির বিরোধী শক্তি’র কাছে। নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে
অনুরোধ- আপনারা পুরো পাহাড়কে অবৈধ অস্ত্রমুক্ত করুন। অন্যথায় সব বন্ধ করে
আরাম আয়াশে দিন কাটানোর পথ ধরুন।
তবে
এটা সত্য যে, সত্যিই যদি আপনারা পাহাড়ের সন্ত্রাস বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ
করেন তাহলে আমাদের মতো সাধারণ জনগণকে অবশ্যই পাশে পাবেন। পাহাড়ী-বাঙ্গালী নির্বিশেষে আমরা
সবাই শান্তি ও সৌহার্দ্যের পার্বত্য চট্টগ্রাম চাই। পার্বত্য চট্টগ্রামকে
সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে আমরা আর দেখতে চাই না।
লেখক : খাগড়াছড়ি থেকে
No comments:
Post a Comment