Saturday, November 14, 2015

অনুপ চেটিয়াকে ছাড়া শান্তি আলোচনায় আগ্রহী নয় উলফা




 
অনুপ চেটিয়াআসামের জঙ্গি সংগঠন উলফার সঙ্গে কেন্দ্রের শান্তি আলোচনা ঘিরে সংশয় দেখা দিয়েছে। সংগঠনের নেতারা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাবেন, গোলাপ বড়ুয়া ওরফে অনুপ চেটিয়াকে ছাড়া তাঁরা শান্তি আলোচনায় যোগ দিতে আগ্রহী নন। শীর্ষস্থানীয় উলফা নেতা শশধর চৌধুরী গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে এ কথা জানান। চলতি মাসের ২৪ তারিখে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ও স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মহর্ষির সঙ্গে উলফা নেতাদের সপ্তম দফার বৈঠক হওয়ার কথা।

আজ শনিবার অনুপ চেটিয়াকে দিল্লি থেকে আসামে নিয়ে যাওয়ার কথা। সিবিআই সে কথা চেটিয়ার পরিবারকে জানানোয় তাঁর স্ত্রী মণিকা বড়ুয়া ও আইনজীবী বিজন মহাজন দিল্লি সফর বাতিল করেছেন। যদিও গতকাল সিবিআই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
ভারতের সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রস্তাবকে ঘিরেই উলফায় ভাগাভাগি চূড়ান্ত হয়ে যায়। অরবিন্দ রাজখোয়া, প্রদীপ গগৈ, শশধর চৌধুরী, চিত্রবন হাজারিকা, রাজু বড়ুয়া, প্রণতি ডেকা প্রমুখ শান্তি আলোচনার পক্ষে। বিপক্ষে রয়েছেন সংগঠনের সুপ্রিম কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া, মুকুল হাজারিকা ও জীবন মোরামের মতো কট্টরপন্থীরা। অনুপ চেটিয়া শান্তি প্রক্রিয়ার পক্ষে মত দেওয়ায় চার বছর ধরেই এই চুক্তির বিষয়ে কেন্দ্র আশাবাদী।
কিন্তু সেই আশার পাশাপাশিই দেখা যাচ্ছে সংশয়। উলফার অন্যতম শীর্ষ নেতা শশধর চৌধুরী গতকাল বলেন, ‘শান্তি আলোচনার প্রায় শেষ ধাপে আমরা পৌঁছে গেছি। শেষ আলোচনা হয়েছে বছর খানেক আগে। ২৪ নভেম্বর পরবর্তী আলোচনার দিন ঠিক হয়েছে। আমরা চাই, সেই বৈঠকেই অনুপ চেটিয়া অংশ নিন। সে জন্য পদ্ধতিগত যা যা করণীয়, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার তা করুক।’ শশধর চৌধুরী বলেন, ‘তা যদি না হয়, তাহলে আমরা কেন্দ্রকে বলব, আলোচনার দিন পিছিয়ে দেওয়া হোক। কারণ, অনুপ চেটিয়া ভারতে এসে যাওয়ার পর তাঁকে বাদ দিয়ে আলোচনারই কোনো মানে হয় না।’
এই সময়ের মধ্যে পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভবপর কি না জানতে চাইলে শশধর চৌধুরী বলেন, অনুপ চেটিয়ার বিরুদ্ধে তেমন কোনো মামলাই নেই। ১৯৮৬ সালে রাজ্যের গোলাঘাট এলাকায় একটা অপরাধ ঘটে। দুই বছর পর রাজ্য সরকার তার তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। অনুপের বিরুদ্ধে সেই মামলাটাই দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন সেটা নয়। শান্তি আলোচনা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এই আলোচনা ও সম্ভাব্য চুক্তি রাজ্যে শান্তি স্থাপনে সাহায্য করবে। এত বছর পর যখন অনুপকে পাওয়া গেছে, তখন কেন্দ্রের উচিত শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা। অনুপের অংশগ্রহণ ছাড়া তা চূড়ান্ত হবে না। সেই কারণে পদ্ধতিগত বিষয়ের সিদ্ধান্তও রাজনৈতিক হওয়া উচিত।’ অনুপ চেটিয়া ফেরায় শান্তি আলোচনার বিরোধীরা আরও হতোদ্যম হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিহারে বিপর্যয়ের পর আসাম-জয়ে উলফার সঙ্গে শান্তি চুক্তিই বিজেপির সেরা হাতিয়ার হতে পারে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও চাইছে অতি দ্রুত এই চুক্তি সম্পন্ন করে নির্বাচনে যেতে। আসামের বিজেপির নেতারা এখন থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ উদ্যোগের জয়গান শুরু করে দিয়েছেন। কংগ্রেসও পিছিয়ে নেই। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেছেন, অনুপ চেটিয়াকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ মনমোহন সিং সরকারই প্রথম নিয়েছিল। কংগ্রেসের চেষ্টা ছাড়া এ কাজ সম্ভবপর হতো না।
সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়, নয়াদিল্লি | আপডেট: ০২:২৭, নভেম্বর ১৪, ২০১৫ | প্রিন্ট সংস্করণ

No comments:

Post a Comment