Sunday, December 13, 2015

আঞ্চলিক পরিষদ অবৈধ: হাইকোর্ট

বাংলাদেশে হাইকোর্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির আওতায় গঠিত পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে। তবে হাইকোর্টের এই রায়ে শান্তি চুক্তির প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। ফলে শান্তি চুক্তি বহাল রইলো বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। শান্তি চুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা দুটো রীট আবেদনের ওপর হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল ২০১০ইং) এই রায় দিয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে,
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলাকে নিয়ে যে আঞ্চলিক পরিষদ আইন করা হয়েছে বাংলাদেশের সংবিধানে তার কোনো বিধান নেই। আদালত বলছে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামোর সাথেও এই আইন সাংঘর্ষিক।

‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট কিন্তু এটাও বলা দরকার যে এই রায় পাহাড়িদের বিরুদ্ধে যায়নি। এতে সংবিধানের বিজয় হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন রীট আবেদনকারীর আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক।

পার্বত্য শান্তিচুক্তি নিয়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ বা মতামত হচ্ছে, এটি দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো চুক্তি নয়। দেশের একটি এলাকায় একটি সশস্ত্র পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে সরকার এবং একটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে চুক্তিটি হয়েছিলো। ফলে এই চুক্তি নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই বলে হাইকোর্টের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু পার্বত্য শান্তিচুক্তির আলোকে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং এ সম্পর্কিত আইনকে হাইকোর্ট অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে। এ ব্যাপারে আদালত বলেছে, সংবিধানে এমন আঞ্চলিক ভিত্তিতে কোনো পরিষদ গঠনের ব্যবস্থা নেই।

এছাড়াও দেশের স্থানীয় সরকার কাঠামোতে যে স্তরগুলো রয়েছে তার সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সঙ্গতিপুর্ন নয়। একারণেই পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে আদালত উল্লেখ করেছে।

পার্বত্য তিন জেলায় জেলা পরিষদ সম্পর্কিত আইনগুলো অবশ্য বহাল রাখা হয়েছে। তবে পার্বত্য এলাকায় জমি না থাকলে অথবা স্থায়ী বাসিন্দা না হলে স্থানীয় নির্বাচনের জন্য ভোটার হওয়া যাবে না বলে জেলা পরিষদ আইনে যে বিধান বা ধারা ছিলো সেই বিধানসহ কয়েকটি ধারাকে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছে।

হাইকোর্ট এই রায় দেওয়া শুরু করে গত সোমবার থেকে।

আওয়ামী লীগের আগের সরকারের সময় ১৯৯৭ সালে সরকার এবং জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য শান্তিচুক্তি সই হয়েছিলো। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রাঙ্গামাটির অধিবাসী মোহাম্মদ বদিউজ্জামান একটি রিট আবেদন করেছিলেন ২০০০ সালে। এরপর ২০০৭ সালে সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবী তাজুল ইসলাম একই ইস্যুতে আরেকটি রিট আবেদন করেছিলেন। দুটি রিট মামলাতেই এখন হাইকোর্টে রায় হলো।

রিট আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে অন্যতম ব্যরিষ্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, চুক্তি বহাল থাকলেও এর আওতায় মূল কয়েকটি বিষয়কে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছে। এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট।

এদিকে সরকারপক্ষে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেছেন, হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হবে। সেকারণে সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

দুটো রিটেই পার্বত্য শান্তি চুক্তি, আঞ্চলিক পরিষদ আইন এবং রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ সংশোধনী আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

উৎস : বিবিসি বাংলা, 13 এপ্রিল 2010 - 11:58

No comments:

Post a Comment