Tuesday, October 24, 2017

রোহিঙ্গাবিহীন রাখাইন এবং বাঙালিবিহীন পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে একটি ভয়ঙ্কর খেলা

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক
রোহিঙ্গা সমস্যার যে আঙ্গিকগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেগুলো হলো- এক. রোহিঙ্গাদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আশ্রয় দেয়া; দুই. আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণতৎপরতায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা; তিন. মিয়ানমারের অমানবিক হিংস্র কর্মকাণ্ড তথা মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর প্রতিবাদ করা; চার. নিজস্ব তৎপরতা ও আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে সসম্মানে ফেরত পাঠানো, পাঁচ. বাংলাদেশের কূটনীতির অনানুষ্ঠানিক সমীক্ষা তথা ব্যর্থতার কারণগুলো অনুসন্ধান করা, ছয়. ভারত নামের বহুলঘোষিত বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের ভূ-কৌশলগত অবন্ধুপ্রতিম কূটনৈতিক অবস্থানের সমালোচনা, সাত.
মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে সীমালঙ্ঘনের সমালোচনা করা ইত্যাদি। যে আঙ্গিকগুলোর আলোচনা এখনো গতি পায়নি, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই সমস্যার কী প্রভাব পড়তে পারে? অন্য কথায় বলতে গেলে, রোহিঙ্গা সমস্যার মানবিক দিক বাদ দিয়ে, সমস্যা থেকে উদ্ভূত নিরাপত্তার দিকটি নিয়ে আলোচনা।

জাতীয় নিরাপত্তার কয়েকটি আঙ্গিকের উদাহরণ: ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ বলতে অনেক কিছুই বোঝায়। জাতীয় নিরাপত্তা মানে কোনো মতেই যুদ্ধ করা বা না করা নয়। কয়েকটি উদাহরণ দিই। এক. সুন্দরবন থেকে ১০ বা ২০ কিলোমিটার উত্তরে রামপাল নামক স্থানে, ভারতের সাথে যৌথ উদ্যোগে, বাংলাদেশের খরচে, কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কারণে, সুন্দরবনের কী ক্ষতি হতে পারে এবং সুন্দরবনের ক্ষতি হলে বাংলাদেশের কী ক্ষতি হতে পারে, এটা জাতীয় নিরাপত্তার একটি আঙ্গিক। দুই. পৃথিবীব্যাপী আলাপ-আলোচনা চলছে জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে, ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণাংশে বেশ কিছু ভূখ- ডুবে যাবে, ডুবে গেলে অনেক জনপদ ও বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে-এটাও জাতীয় নিরাপত্তার একটি আঙ্গিক। তিন. বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে কক্সবাজার জেলার সমুদ্রসীমা থেকে পশ্চিম দিকে অল্প দূরত্বে ছোট্ট একটি দ্বীপ আছে, নাম সোনাদিয়া। সোনাদিয়া দ্বীপকে কেন্দ্র করে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করার আলোচনা অনেক দিন ধরে চলেছে। বৃহৎ একটি অর্থনৈতিক শক্তিসম্পন্ন দেশ বা জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের অন্যতম একটি দেশ যার নাম চীন, এই সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর বানানোর কাজে বাংলাদেশকে ব্যাপক সাহায্য করতে প্রস্তাব দিলো। চীনের এই প্রস্তাব গ্রহণ করা বা না করা বাংলাদেশের এখতিয়ার। বাংলাদেশে সরকার নিজের বুদ্ধিতে অথবা বন্ধুদের বুদ্ধিতে, চীনের প্রস্তাব গ্রহণ করল না। এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করা বা না করা, জাতীয় নিরাপত্তার একটি আঙ্গিক। চার. মাত্র দুটি দেশ বাংলাদেশের সীমান্তের সঙ্গে লাগোয়া- ভারত ও মিয়ানমার। ভারতের সঙ্গে যাবতীয় তৎপরতা ঘঁষা-মাজা, গলাগলি, ওঠা-বসা, লেনদেন, লুকোচুরি ইত্যাদি চলছে, কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে বলতে গেলে কিছুই চলেনি। বাংলাদেশে সরকার, তৎপরতা চালালে বা না চালালে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে কী হতে পারে বা কী হতে পারে না, এ নিয়ে সচেতন থাকার বিষয়টিও জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম আঙ্গিক। পাঁচ. বাংলাদেশের সীমান্ত যদি কেউ লঙ্ঘন করে বা এ দেশের ভূখ-ের সার্বভৌমত্ব যদি কেউ লঙ্ঘন করে, সেই লঙ্ঘনকারীকে কীরকম জবাব দেয়া উচিত ওই আলোচনা বা সচেতনতা, জাতীয় নিরাপত্তার একটি আঙ্গিক। ছয়. মুসলিম বিশ্বের অঘোষিত নেতা বা নেতৃস্থানীয় দেশ সৌদি আরব। তার নেতৃত্বে অনেকগুলো দেশের একটি সামরিক জোট হয়েছে ছয় মাস বা নয় মাস বা এক বছর আগে। বলা হচ্ছে, এটা সন্ত্রাসবিরোধী জোট। বলা হচ্ছে, এটার সামরিক অধিনায়ক সৌদি আরব থেকে নিযুক্ত হবেন না; বলা হচ্ছে এই কর্মকা- পরিচালনার জন্য জোটের সব সদস্যই বাস্তবে সশরীরে সামরিক অবদান রাখবেন। এই বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে কি হবে না, এই সচেতনতা বা এই আলোচনা জাতীয় নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিক। সাত. প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট ফ্যাসিলিটি চাইল এবং বাংলাদেশ সরকার পানির দামে সেটা দিয়ে দিলো। এভাবে ট্রানজিট দেয়ার কাজটি ভালো কি মন্দ, এরূপ ট্রানজিট দেয়ার কাজটি বাংলাদেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য বা বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্যের জন্য বা বাংলাদেশের সামরিক প্রস্তুতির জন্য বা আঞ্চলিক সামরিক সঙ্কটে বাংলাদেশের ভূমিকার জন্য উপকারী হবে না অপকারী হবে, এই সচেতনতা বা আলোচনা জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম আঙ্গিক। আট. পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্রোহী সশস্ত্রগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে, আলোচনা চালানো একটি অভিনন্দনযোগ্য কাজ। তবে আলোচনার পর বা আলোচনার মাধ্যমে বিদ্রোহীগোষ্ঠীকে কতটুকু ছাড় দেয়া হবে বা কতটুকু ছাড় দেয়া হবে না কিংবা কোন কোন বিষয়ে ছাড় দেয়া হবে এই সচেতনতা বা আলোচনা অবশ্যই, অবশ্যই জাতীয় নিরাপত্তার অলঙ্ঘনীয় আঙ্গিক। নয়. আরো অনেক উদাহরণ প্রদানযোগ্য। কলামের কলেবর সীমিত রাখার স্বার্থে আর উদাহরণ না দিয়ে আলোচনার পরবর্তী ধাপে যাচ্ছি।

জাতীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা কয়েকটি দেশে: ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল তথা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। আমেরিকান সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার) তথা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল) পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে, তাদের প্রেসিডেন্টের (রিচার্ড নিক্সন) কাছে সুপারিশ করেছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য। ২০১৭ সালেও আমেরিকা সরকারের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল যেরূপ সুপারিশ করছে, মার্কিন সরকার ওইরূপ আচরণ করছে। আমেরিকান সরকারের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল অবশ্যই তাদের মাতৃভূমির, তাৎক্ষণিক স্বার্থ, অদূরভবিষ্যতের স্বার্থ এবং দূরবর্তী স্বার্থ বিবেচনা করেই এরূপ সুপারিশ করছে। বাংলাদেশের অন্যতম বড় প্রতিবেশী, একটি আঞ্চলিক শক্তি যার নাম ভারত, একটি উদীয়মান সামরিক শক্তি যার নাম ভারত, তাদের দেশেও একটি নিরাপত্তা পরিষদ ব্যবস্থা কার্যকর রেখেছে। নরেন্দ্র মোদির আমলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হচ্ছেন অজিত দোভাল। তিনি পেশাগতভাবেই গোয়েন্দা বাহিনীর লোক। অজিত দোভাল পেশাগত দায়িত্ব পালনে জীবনে একনাগাড়ে অনেক বছর ভারতের পশ্চিমের প্রতিবেশী, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ছদ্মবেশে একজন দেশপ্রেমিক পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে অবস্থান করে ভারতের গোয়েন্দা তৎপরতায় অবদান রেখেছেন বা জোগান দিয়েছেন। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের একজন নিরাপত্তা উপদেষ্টা আছেন এবং একটি নিরাপত্তা পরিষদ আছে।

এমনকি, যাবতীয় উপদ্রব সৃষ্টিকারী আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারেও একজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আছেন, যার নাম উ থাং টুন। পৃথিবীর বেশির ভাগ অগ্রগামী বা উন্নত দেশে এরূপ ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশে নেই। কেন নেই, সেই আলোচনা করতে গেলে অনেক কথা বলতে হবে; অনেকে অসন্তুষ্ট হবেন। এই মুহূর্তে এই কলামে সে আলোচনায় না যাওয়ার কারণ এই নয় যে, কে অসন্তুষ্ট হবেন বা হবেন না; বরং কারণ হলো আজকের কলামের ফোকাস অন্য।

বাংলাদেশে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা যদি থাকতেন: তবে কলামের এই অংশ থেকে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার আগে দৈনিক প্রথম আলোর গত ১৭ সেপ্টেম্বর সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠার একটি শিরোনামের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। শিরোনামটি ছিল ‘রোহিঙ্গা-ঢলের আগাম তথ্য ছিল না : প্রস্তুতি নিতে পারেনি সরকার’। যদি বাংলাদেশে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ থাকত, যদি একজন নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাকতেন, তাহলে সম্ভাবনা ছিল যে, সেই নিরাপত্তা পরিষদ অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারকে বা সরকারপ্রধানকে একাধিক বিষয়ে সজাগ রাখতেনÑ এক. মিয়ানমারের সঙ্গে শীতল সম্পর্কের বিষয়ে। দুই. মিয়ানমার সরকার কর্তৃক রাখাইন প্রদেশে বিভিন্ন তৎপরতা প্রসঙ্গে। তিন. বাংলাদেশে দুর্যোগ তথা বন্যা হয়েছে; তাই খাদ্য ঘাটতি হতে পারে, অতএব বিশ্বের খাদ্য উদ্ধৃত্ত দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ দ্রুত করার ব্যাপারে। চার. মিয়ানমার সীমান্তে সম্ভাব্য সশস্ত্র গোলযোগের প্রেক্ষাপটে বা গোলযোগের প্রতি উত্তর দেয়ার জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবি বা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতির ব্যাপারে।

কলামের শিরোনামে ফিরে যাচ্ছি। পাঠকের সামনে যদি এমন কোনো মানচিত্র থাকে যেখানে উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা-মিজোরাম-মনিপুর-নাগাল্যান্ড প্রদেশগুলো এবং মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ এবং বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকে একসঙ্গে দেখা যায়, তাহলে এই কলামের বক্তব্যটি বুঝতে সুবিধা হবে। রাখাইন প্রদেশের আগের নাম আরাকান। এই প্রদেশের ভূমি যেমন সমতল ও পার্বত্য এলাকার মিশ্রণ, তেমনি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও একটু ওপরে উল্লিখিত ভারতীয় প্রদেশগুলোর ভূমিও এইরূপ সমতল ও পার্বত্য এলাকার মিশ্রণ। প্রত্যেকটি এলাকায় তাদের দেশের সরকারবিরোধী কর্মকা- বিদ্যমান। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, ১৯৪৭ সালে ভারতের সঙ্গে যেতে চেয়েছিল; যেতে পারেনি। মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশ (বর্তমান নাম রাখাইন প্রদেশ) ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চেয়েছিল; থাকতে পারেনি। উত্তর-পূর্ব ভারতের দক্ষিণাংশের প্রদেশগুলো ভারতের সঙ্গেই থাকতে চায়নি, স্বাধীনতা চেয়েছিল; সম্ভব হয়নি। এই পুরো অঞ্চলটি অশান্ত এবং উপদ্রুত। ছোঁয়াচে রোগের মতো, এক এলাকার ঘটনা অন্য এলাকার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এখন থেকে ৮০-৯০ বছর আগে ব্রিটিশ-ভারতের শাসনকর্তারা এবং লন্ডনে অবস্থিত নীতিনির্ধারকেরা এ সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন। ইংরেজি ভাষায় লিখিত একটি পুস্তকের নাম লিখছি- ‘দি ফিউচার অব ইন্ডিয়া’; ১৯৪৩ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত। লেখকের নাম স্যার রেজিনাল্ড কুপল্যান্ড। ইংরেজি ভাষায় লিখিত আরেকটি পুস্তকের নাম দিচ্ছি- ‘দি নর্থ ইস্ট: রুটস অব ইনসার্জেন্সি’; কলকাতা মহানগরী থেকে ‘ফার্মা কেএলএম প্রাইভেট লিমিটেড’ কর্তৃক ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত; লেখকের নাম: প্রফুল্ল চৌধুরী। এই দুটি বইয়ের মধ্যে একটি বিষয়ে আলোচনা আছে।

তা হলো ‘কুপল্যান্ড প্ল্যান’ বা ক্রাউন কলোনি প্ল্যান। ১৯৩০-এর দশকে আসাম প্রদেশের গভর্নর স্যার রবার্ট রিড এবং স্যার রেজিনাল্ড কুপল্যান্ড কর্তৃক যৌথভাবে একটি প্ল্যান দেয়া হয়েছিল-ব্রিটিশ কর্তৃক ভারত ত্যাগের সময়, ভারতকে চারটি মূল অঞ্চলে ভাগ করা হোক। অঞ্চলগুলো নিম্নরূপ: এক. সিন্ধু নদীর উপত্যকা বা দি ইনডাজ ভ্যালি; দুই. গঙ্গা নদীর উপত্যকা বা দি গেঞ্জেস ভ্যালি; তিন. দাক্ষিণাত্য বা দি ডেকান এবং চার উত্তর-পূর্ব ভারত নামে পরিচিত পার্বত্য এলাকা। কুপল্যান্ড এবং রিড উভয়ের যৌথ মত ছিল, যেহেতু এই পার্বত্য এলাকাটি আদতেই ভারতের না এবং বার্মারও না, তাই তাদেরকে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়ে লন্ডনের ব্রিটিশ ক্রাউনের অধীনে রাখা হোক; তার নাম হবে ক্রাউন কলোনি। এই কলোনির দক্ষিণে থাকত তৎকালীন আরাকান ও তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং উত্তরে থাকত বর্তমানের ত্রিপুরা মনিপুর মিজোরাম নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল। উত্তর সীমান্ত হতো তৎকালীন ভারত ও চীনের সীমান্তরেখা। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের সীমান্ত হতো বঙ্গোপসাগরের নীল পানি। যা হোক, যেকোনো কারণেই হোক রেজিনাল কুপল্যান্ড এবং রবার্ট রিড এর পরিকল্পনা বা প্রস্তাব গুরুত্ব পায়নি; অতএব বাস্তবায়নও সম্ভব হয়নি। গুরুত্ব না পেলেও, এলাকার ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব কোনো মতেই কমেনি বরং দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

রাখাইনের গুরুত্ব ও রোহিঙ্গা: মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশটি খুব ছোট নয়। এই প্রদেশের মাঝামাঝি এলাকায় এবং উত্তরাংশে রোহিঙ্গা মুসলমান জনগোষ্ঠী বসবাস করে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে রাখাইন প্রদেশ থেকে বের করে দিচ্ছে। গত ২ অক্টোবর মিয়ানমার থেকে আগত একজন মন্ত্রী এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রসঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এই কলাম লেখা শেষ করছি সোমবার ২ অক্টোবর রাত ৮টায় এবং পাঠক পড়ছেন ৪ অক্টোবর ২০১৭ তারিখের প্রথম মুহূর্ত থেকে নিয়ে অনলাইনে এবং সূর্যোদয়ের পর থেকে মুদ্রিত কপিতে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের পারস্পরিক আলাপের সারমর্ম হলো, মিয়ানমার সম্মত হয়েছে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে; উভয় সরকার একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করবে। বিস্তারিত দ্রুতই জানা যাবে। পাঁচ লাখের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে ছয় সপ্তাহের কম সময়ে এবং এখনো আসছে। যত দিন রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা চলবে; তত দিন রোহিঙ্গারা আসবে। তাদেরকে ফেরত নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের মন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত ওয়াদা আংশিক সন্দেহ এবং আংশিক স্বচ্ছতা নিয়ে গ্রহণ করছি। সন্দেহ এই যে, মিয়ানমার সরকার বিশ্ববাসীকে এবং বাংলাদেশ সরকারকে আপাতত ঠা-া করার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এরূপ একটি ওয়াদা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সরকারের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে পাতলা প্রলেপ দেবে এবং সাফল্যের আভা ছড়াবে। এর পাশাপাশি আশা করব, নির্দিষ্ট কিছু ইতিবাচক শর্তসাপেক্ষে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে ফেরত যাবে; মিয়ানমার তাদের ফেরত নেবে। বাংলাদেশের মাটিতে অনেক বছরের মেয়াদে বা দীর্ঘ মেয়াদে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে রাখার প্রসঙ্গটি জাতীয় নিরাপত্তার আঙ্গিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করতে হবে। মানবিক সহায়তা এবং বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যে সমন্বয় করতেই হবে।

আত্মসন্তুষ্টি লাভের কিছু নেই: কোনো মতেই কোনো অবস্থাতেই, আত্মসন্তুষ্টি লাভের কিছুই নেই। গত চার-পাঁচ সপ্তাহের বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ এবং কলাম যদি কেউ পড়ে থাকেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই রাখাইন অঞ্চলে চীন ও ভারতের, আলাদা আলাদা, আর্থিক ও কৌশলগত বিনিয়োগ সম্বন্ধে অবগত হয়েছেন। চীন ও ভারত কোনো অবস্থাতেই এমন একটি রাখাইন প্রদেশ চাইবে না, যেটা তাদের বিনিয়োগের প্রতি ও তাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরুপ। হুমকিবিহীন ‘শান্তশিষ্ট’ রাখাইন মানেই হলো, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীবিহীন রাখাইন প্রদেশ। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীবিহীন করতে হলে তিনটি পদক্ষেপ নিতে হবেÑ এক. রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মেরে ফেলতে হবে; দুই. তাদের বিতাড়িত করে অন্য দেশে পাঠিয়ে দিতে হবে এবং তিন. তাদের মনের মধ্যে এমন ভয় ঢুকাতে হবে, তারা যেন ফেরত আসতে না চায় এবং চাইলেও ফেরত এসে যেন দেহ ও মনে বৌদ্ধমনা হয়ে যায়। একই সঙ্গে, মিয়ানমার রাষ্ট্র রাখাইন প্রদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনদের এবং অন্য মানুষগুলোকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেবে, তাদের গ্রামগুলোকে দুর্গের মতো করে সাজাবে, তাদের রাস্তাঘাটগুলোকে সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহারের উপযোগী করবে এবং চীন, ভারত ও মিয়ানমারের যৌথ হোক বা স্বতন্ত্র হোক, ভূ-কৌশলগত ও রণকৌশলগত ব্যবহারের জন্য উপযোগী করে তুলবে। যত পরিবর্তনই হোক না কেন, পাহাড়ের জায়গায় পাহাড় থাকবে এবং জঙ্গলের জায়গায় জঙ্গল থাকবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গ: ছলে-বলে-কৌশলে, সময় নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদেরকে বহিষ্কার করা হবে বলে আশঙ্কা বিস্তৃতভাবে বদ্ধমূল হয়েছে। বিশেষত ওই বাঙালি যারা ১৯৭৮ সাল থেকে নিয়ে ১৯৮২ পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছে। তবে এই প্রসঙ্গে ভালো-মন্দ আলোচনা আজকে করব না। একটু আগেই সুপরিচিত শব্দগুলো লিখেছি- ছল-বল-কৌশল। এইরুপ ছল-বল ও কৌশল অবলম্বন ও প্রয়োগ করছে বাংলাদেশ সরকার, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং বাংলাদেশের কিছু এনজিও, বুদ্ধিজীবী এবং বাংলাদেশের মিডিয়ার একটি অংশ। এইরূপ ছল-বল ও কৌশল প্রয়োগের অনেক উদাহরণের মধ্যে একটি উদাহরণ হলো ভূমিবিরোধ নিষ্পন্ন কমিশন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের অবস্থান বা উপস্থিতি কেন: এ প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা অতীতে অনেকবার করেছি, অনেক কলাম লিখেছি। একাধিক লেখকের বই পাবেন পড়ার জন্য। আমি আজকে দু’টি বইয়ের রেফারেন্স উল্লেখ করছি। এক. বইয়ের নাম : ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিপ্রক্রিয়া ও পরিবেশ পরিস্থিতির মূল্যায়ন’। বইয়ের লেখক : মেজর জেনারেল অব: সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক। বইয়ের প্রকাশক মওলা ব্রাদার্স, ফোন নম্বর : ৭১৭৫২২৭ অথবা ৭১১৯৪৬৩। বইটির প্রাপ্তিস্থান : যেকোনো বড় বই বিক্রয়ের দোকানে অথবা চট্টগ্রাম মহানগর প্রেসক্লাব বিল্ডিংয়ে বাতিঘর অথবা ঢাকা মহানগর বেইলী রোডে সাগর পাবলিশার্স অথবা প্রকাশকের স্টক থেকে অথবা রকমারিডটকম নামক অনলাইন বই বিক্রেতা। দুই. বইয়ের নাম : ‘চাকমা জাতির ইতিহাস বিচার : অখ- সংস্করণ’। বইয়ের লেখক : অশোক কুমার দেওয়ান। প্রকাশক শিকড়। ফোন নম্বর : ৪৭১১৬০৫৪। এই বইগুলোতে বাঙালি এবং চাকমা প্রসঙ্গ বিস্তারিতভাবে আলোচিত। তারপরেও কিছু উল্লেখ করছি। ঠিক পরবর্তী অনুচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।

শান্তিবাহিনীর বিদ্রোহের কারণেই বাঙালি বসতি স্থাপন: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নামক গোপন রাজনৈতিক দলটির জন্ম হয় ১৯৭২ সালে। এই দলটির গোপন সশস্ত্র শাখা সৃষ্টি হয় ১৯৭৩ সালে; যদিও প্রশিক্ষণের জন্য প্রথম ব্যাচ ভারতে গিয়েছিল ১৯৭২ সালের শেষে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর নাম ছিল শান্তিবাহিনী। এরা বিদ্রোহ শুরু করে ১৯৭৫-এর ডিসেম্বর থেকে। ডেপুটি চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে একাধিকবার পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করেন ও উপজাতীয় জনগণের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নপ্রক্রিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে তদারকি ও উৎসাহ দেয়ার জন্য, সবার পরামর্শ নিয়েই তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিদ্রোহীগোষ্ঠীর সঙ্গে সংলাপের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম সন্ধান করেন ও সক্রিয় করেন। কোনো চেষ্টাতেই কিছু হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। কারণ শান্তিবাহিনী বা জনসংহতি সমিতি ছিল চরম বামপন্থী সংগঠন। তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল দীর্ঘমেয়াদি গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমাজব্যবস্থা থেকে সামন্ততন্ত্র বা ফিউডালিজম তথা রাজা-দেওয়ান-খিসা-তালুকদার-হেডম্যান ইত্যাদির শাসন থেকে উপজাতীয় সমাজকে মুক্ত করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। ওইরূপ একটি গোষ্ঠী, বিদ্রোহ শুরু করার দু-তিন বছর বা তিন-চার বছরের মাথাতেই বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসবে, এরূপ আশা করাটাই অস্বাভাবিক। কারণ আলোচনার টেবিলে বসলে সমাধানের আলো দেখা যায়। কিন্তু বামপন্থী গেরিলা গোষ্ঠীগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আগ্রহী নয়, তারা তাদের মনমতো সমাধানে আগ্রহী, যার মানে হলো সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে সমাধান অর্জন করা।

সম্মানিত পাঠক, মেহেরবানি করে খেয়াল করুন, আমরা আলোচনা করছি ১৯৭০-এর দশকের কথা, যেই সময় দক্ষিণ এশিয়াতেই অন্তত ১৬টি এইরূপ বিদ্রোহ সচল ছিল এবং পৃথিবীব্যাপী অন্তত অর্ধশত এরূপ বিদ্রোহ সচল ছিল। কোনো মতেই ২০১৭ সালের বাস্তবতা দিয়ে ১৯৭৭ বা ১৯৭৯কে বিচার করলে চলবে না। সেই সময় মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং পরে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অনেকবার স্পষ্ট করেই আওয়াজ দেন, আহ্বান জানান যেন শান্তিবাহিনী আলোচনার টেবিলে আসে। এইরূপ আহ্বানের অন্যতম মাধ্যম ছিল তৎকালীন অন্যতম ব্রিগেড কমান্ডার, ব্রিগেডিয়ার এ এস এম হান্নান শাহ (এক বছর আগে মরহুম)। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এটা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, যদি শান্তিবাহিনী আলোচনার টেবিলে না আসে সমাধানের প্রয়োজনে, তাহলে সরকার একতরফাভাবেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে থাকবে। অর্থাৎ তিন-চার বছর পুরনো শান্তিবাহিনীকে অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে দেয়া হবে না।
তিনটি কথা: এই স্থানে আমি সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই তিনটি কথা। প্রথম কথা এই যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনী ১৯৭৫-এর ডিসেম্বরে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেছিল এবং যে কারণেই সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করুক না কেন, সেই কারণগুলো অবশ্যই ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরের আগেকার সময়ের বা আগের বছরগুলোর। এ রকমও বলা যায় যে, ১৯৪৭ থেকে শুরু করে ১৯৭৫ পর্যন্ত সময়ে, পার্বত্য জনগোষ্ঠীর ওপর যেসব অবিচার বা অন্যায় করা হয়েছিল, সেগুলোর প্রতিক্রিয়ায় বা সেগুলোর প্রতিবাদে, নিজের উদ্যোগে বা প্রতিবেশীর উৎসাহে বা উভয়ের মিশ্রিত প্রভাবে, শান্তিবাহিনী বিদ্রোহ শুরু করেছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় কথা এই যে, শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র বিদ্রোহের প্রস্তুতি ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর থেকে পেছন দিকে অন্ততপক্ষে তিন বছর ধরেই নেয়া হচ্ছিল, ভারতের মাটিতে এবং বাংলাদেশের মাটিতে। তৃতীয় এবং শেষ কথা এই যে, সশস্ত্র বিদ্রোহীরা যেমন বিভিন্ন কৌশল ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাদের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য, তেমনি বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোও নিজ নিজ দেশে বিদ্রোহ দমনের জন্য বিভিন্ন কৌশল ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে, সরকারের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১৯৭৬-৭৭-৭৮ সালের কথা বলছি। ওই সময় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আগ্রহে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভৌত কাঠামো উন্নয়নের জন্য ইনটেনসিভ বা নিবিড় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এসব করতে গেলে অনেক কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণকাজের প্রয়োজন পড়ে যেমন রাস্তা নির্মাণ, বিল্ডিং নির্মাণ ইত্যাদি। ওই সময় পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের অভ্যাসই ছিল না এই ধরনের কায়িক শ্রম করার। ফলে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের জন্য শ্রমিক প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যখন বিভিন্ন নির্মাণকাজ ও ভৌত কাঠামো কাজ চালু করা হলো, তখন শান্তিবাহিনী কন্ট্রাক্টরের মানুষগুলোকে এবং যৎকিঞ্চিৎ প্রাপ্ত পাহাড়ি শ্রমিকদের আক্রমণ করে হত্যা করা শুরু করল। শ্রমিকদের আবাসিক শেড বা বেড়ার ঘরগুলোতে আগুন দিয়ে মেরে ফেলা হলো। শান্তিবাহিনী প্রচার করল যে, এসব উন্নয়ন কর্মকা- করা হচ্ছে জুম্মু জাতিকে ধ্বংস করার জন্য। একই সাথে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধি পেল। সেনাবাহিনীর কর্মকা-ে লজিস্টিকস সহযোগিতার জন্য স্থানীয় পাহাড়ি জনসাধারণ এগিয়ে আসতে চাইলেও, শান্তিবাহিনীর আক্রমণের কারণে আসতে পারত না। ফলে অন্য প্রকৃতির জনসাধারণ বা জনগোষ্ঠী বা জনবসতি প্রয়োজন আবশ্যক হয়ে পড়ল। এই হলো অতি সংক্ষেপে, পুনশ্চ অতি সংক্ষেপে, বাঙালিদেরকে বসতি স্থাপনের জন্য অনুমতি প্রদানের প্রেক্ষাপট।

বাঙালিরা সেখানে যাওয়ার পর অনেক অনাবাদি জায়গা আবাদ করার উদ্যোগ হলো, ধানচাষ বৃদ্ধি পেল, সবজিচাষ বৃদ্ধি পেল, অর্গানাইজড মার্কেটিং শুরু হলো, নির্মাণকাজের জন্য শ্রমিক পাওয়া গেল। বাঙালিরা বসতি স্থাপন শুরু করার পর নতুন নতুন সমস্যারও উদ্ভব হলো যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে। বসতি স্থাপনের সময় তদারকি ও পরিকল্পনায় দুর্বলতা ছিল; অভিজ্ঞতার অভাবে এটাও সত্য। যা হোক, সার্বিকভাবে পুরনো সমস্যার কিছুটা সমাধান আবার নতুন সমস্যার নতুন সমাধান হয়ে উঠল দৈনন্দিন কাজ; ইংরেজি পরিভাষায় অর্ডার অব দি ডে। বাঙালিদেরকে বসতি স্থাপন করতে দেয়ার প্রতিবাদে বা প্রতিক্রিয়ায়, উত্তেজিত হয়ে, শান্তিবাহিনী বাঙালি বসতিগুলোতে আক্রমণ করতেই থাকল এবং হাজারে হাজার বাঙালি মরতেই থাকল। বাঙালি মরার সাথে সাথে, বাঙালিরা পাহাড়িদের গ্রামে আক্রমণ করতে শুরু করল, আক্রমণের ফলে পাহাড়িরা মারা গেল এবং পাহাড়িরা শরণার্থী হয়ে ভারতে গেল। বহু বছর এই প্রক্রিয়া বা এই সাইকেল বা আক্রমণাত্মক চক্র চলেছে। একপর্যায়ে কৌশলগুলো পুরনো হয়ে আসে।
 বাঙালি বহিষ্কারের চিন্তা: অতএব বাঙালিদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বহিষ্কার করার নতুন নতুন পন্থা বা ধান্ধা সন্ধান শুরু হলো। ১৯৮২-৮৩, ১৯৮৭-৮৮ বা ১৯৯২-৯৩ বা ১৯৯৬-৯৭ সালে শান্তিবাহিনী অবশ্যই সরকারের কাছে আবেদন করেছে, দাবি দিয়েছে বাঙালিদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য। উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের কিছু সরকার এবং এনজিও এই দাবি দিয়েছে। উত্তর হয়েছে: না, প্রত্যাহার হবে না। কিন্তু ১৯৯৭-এর ডিসেম্বরের শান্তিচুক্তির মাধ্যমে এমন একটি ছদ্মবেশী বন্দোবস্ত করা হয়েছে যেন ক্রমান্বয়ে বাঙালিরা ফেরত আসতে বাধ্য হবে। শান্তিচুক্তির মাধ্যমে, পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য দু’টি ভোটার তালিকার কথা তৎকালীন ও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার স্বীকার করে নিয়েছে। তৎকালীন ও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার স্বীকার করে নিয়েছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রশাসনে ও নেতৃত্বে বাঙালিরা থাকবে না। বাঙালিরা এর প্রতিবাদ করেছে, আমরাও প্রতিবাদ করছি। ভূমি নিষ্পত্তি কমিশনের মাধ্যমে, মিষ্টি প্রলেপ দিয়ে তিতা ট্যাবলেট খাওয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বৃহত্তর বাংলাদেশের জনগণ, বৃহত্তর বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, পার্বত্য চট্টগ্রামে জান-প্রাণ, রক্ত ঘাম দিয়েছেন এমন ব্যক্তিরা যেহেতু বিষয়টিতে মনোযোগ দেয়ার সময় পান না সেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিরা এতিমের মতো লড়াই করে যাচ্ছেন; বেঁচে থাকার লড়াই।

অসাধারণদের অসাধারণ চেষ্টা: বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে কিছু মামলার এমন রায় দিয়েছেন, যেই রায়গুলোর কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল; যেই রায়গুলোর কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল; যেই রায়গুলোর কারণে আইনি প্রক্রিয়ার দুয়ার চার ভাগের তিন ভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অতএব, অশান্তি আনার রাস্তা খুলে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রদ্ধেয় চিন্তাশীল আইনজীবীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে মনোযোগ দেবেন এরূপ বিনীত আশা করি। পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় থাকা সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি নিষ্পত্তি কার্যকলাপের তদারকিতে তথা ভূমি নিষ্পত্তি কমিশনের বিরোধিতাকারীদের মোকাবেলা করার কাজে, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা জড়িত হওয়ার বিষয়টিও রহস্যজনক। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভেতরে এই মুহূর্তে বিরাজমান সমস্যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা।

মানচিত্র থাকলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা: এই কলামের সচেতন জ্ঞানী-গুণী পাঠকের সমীপে আমার বিনীত নিবেদন তথা আবেদন, আপনারা মেহেরবানি করে উত্তর-পূর্ব ভারত, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ এবং এতদসংলগ্ন মিয়ানমার দেখা যায় এই রকম একটি মানচিত্র সামনে নিয়ে, আলোচ্য বিষয়গুলোকে নিয়ে চিন্তা করুন। আরাকান নামক প্রদেশকে রাখাইন প্রদেশ বানানো হয়েছে। আকিয়াব নামক বন্দরনগরীকে সিতুওয়ে বানানো হয়েছে। আরাকান থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হচ্ছে। অতএব আরাকানের পাহাড়ি ভূমিতে ও জঙ্গলে যদি বাংলাদেশের কোনো বিদ্রোহী সশস্ত্রগোষ্ঠী বা ভারতের মনিপুর নাগাল্যান্ড ইত্যাদির বিদ্রোহীগোষ্ঠী আশ্রয় নিতে চায়, তাহলে তারা নিতেই পারে। ভারতের বিরুদ্ধে মিয়ানমার কাউকে আশ্রয় দেবে না। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাউকে আশ্রয় দিতেও পারে। বিপরীত বক্তব্যটিও প্রণিধানযোগ্য।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় ও জঙ্গলের ভেতরে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিদ্রোহীগোষ্ঠী তাদের আশ্রয়স্থল বা ক্যাম্প বানাতেও পারে। আমরা এই ধরনের সব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। আমরা সচেতন থাকতে চাই। আরাকানের মাটির নিচে গ্যাস ও খনিজসম্পদ আছে এবং আরাকানের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের পানির নিচে গ্যাস ও তেল আছে। মিয়ানমার সরকার সেগুলো উত্তোলনের বন্দোবস্ত করছে। তা ছাড়া আরাকানের সমুদ্রতটে চীনের ব্যবহারের জন্য এবং ভারতের ব্যবহারের জন্য বন্দর নির্মিত হচ্ছে; ওইসব বন্দর থেকে তেল গ্যাস ও মালামাল চীন ও ভারতে যাওয়ার জন্য আলাদা পাইপলাইন ও আলাদা সড়ক নির্মিত হচ্ছে। এরূপ পরিস্থিতিতে মিয়ানমার সরকার চায় আরাকানে যেন কোনো অশান্ত পরিবেশ না থাকে। যদি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আরাকানে থাকে এবং যদি কোনো দিন রোহিঙ্গারা সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয় তাহলে তারা স্থানীয়দের কাছ থেকে সহায়তা পেতে পারে।


এরূপ সহায়তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নির্মূল করার জন্য মিয়ানমার যাবতীয় বন্দোবস্ত গ্রহণ করছে। আমরা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে চাই না। মিয়ানমার তাদের জনগোষ্ঠীকে আমাদের দেশে পাঠিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করছে। মিয়ানমারকে এই কাজ করতে দেয়া যায় না। আমরা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে স্বাগত জানিয়েছি এবং জানাতেই থাকব। কিন্তু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আমরা চিরদিনের জন্য বাংলাদেশে রাখতে পারব না। জাতিসঙ্ঘ অথবা বহুজাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে ও সংশ্লিষ্টতায় মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করতে সসম্মানে ও নাগরিক অধিকারসহ। এটা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য অতি প্রয়োজন।


বাঙালিরা না থাকলে কী হতে পারে: যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিরা না থাকে তাহলে, কৌশলগতভাবে সেখানে বাংলাদেশ সরকারের বা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষার বা বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিশদ ক্ষতি হতেই পারে এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। বাঙালিবিহীন পার্বত্য চট্টগ্রামে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগুলো থেকে বসতি স্থাপন করার জন্য অন্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বা উপজাতীয় গোষ্ঠীর মানুষ যে আসবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। বাঙালিবিহীন পার্বত্য চট্টগ্রামে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সরকারগুলোর বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ বা ইনসার্জেন্সিতে লিপ্ত গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় বা সংগঠনগুলো যে প্রশিক্ষণের জন্য ক্যাম্প বানাবে না বা আশ্রয় নেবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। বাঙালিবিহীন পার্বত্য চট্টগ্রামে, সাবেক শান্তিবাহিনী বা তাদের নতুন কোনো রূপের বা নতুন কোনো আকারের সংগঠন যে নতুন করে তৎপরতা শুরু করবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। বাঙালিবিহীন পার্বত্য চট্টগ্রামে, যেকোনো প্রয়োজনে সামরিকবাহিনী চলাচলের সময় লজিস্টিক সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভীষণ শূন্যতার সৃষ্টি হবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। বাঙালিবিহীন পার্বত্য চট্টগ্রামে মিয়ানমারের আগ্রাসী ছদ্মবেশী সরকার যে সন্ত্রাসী তৎপরতায় উসকানি দেবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই।

বাঙালিবিহীন পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৭১ সালের শেষের দিকের মতো, ওই আমলের ভারতীয় মেজর জেনারেল এস এস উবানের মতো অন্য কোনো জেনারেলের নেতৃত্বে যে একটি গেরিলা সামরিকবাহিনী গঠিত হয়ে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার তৎপরতা সৃষ্টি করবে না বা নিদেনপক্ষে চট্টগ্রাম বন্দরকে অচল করার চেষ্টা করবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। ১৯৭১ সালে উবানের কৌশলগত যুদ্ধ ছিল তৎকালীন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, কিন্তু মাটিটা ছিল চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের। এখন মাটি চট্টগ্রামের ও বাংলাদেশের, বন্দর চট্টগ্রামের ও বাংলাদেশের কিন্তু নতুন উবান সাহেব বাংলাদেশের বন্ধু হবে তার কোনো গ্যারান্টি আছে কি? বাঙালিবিহীন পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীরা যে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে হুমকির সামনে রাখবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। কাপ্তাই বাঁধের ষোলোটি পানি নিষ্কাশন গেট যদি কোনো সময় একসঙ্গে ছেড়ে দেয় তাহলে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের উভয় দিকে আট থেকে দশ মাইলব্যাপী এলাকা প্লাবিত হয় এবং চট্টগ্রাম বন্দর সাময়িকভাবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। (দ্রষ্টব্য: ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে, বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের শেষাংশে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামে, বাংলাদেশী গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা সম্বন্ধে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল উবানের নেতৃত্বাধীন ‘ফ্যানটম’ বাহিনীর তৎপরতা সম্বন্ধে যেসব পাঠকের সম্যক ধারণা নেই, তাদের জন্য, এই অনুচ্ছেদের শেষাংশ বোঝা একটু কষ্টকর হতেই পারে। তার জন্য আমি দুঃখিত)।

সাবধানতা অবলম্বনের আহ্বান: রোহিঙ্গা (মুসলমান) বিহীন রাখাইন প্রদেশ সৃষ্টির প্রক্রিয়া অনেক দূর অগ্রগতি হয়েছে। এই বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষকে আর ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝাতে হবে না। কিন্তু বাঙালিবিহীন পার্বত্য চট্টগ্রাম আগামীকাল বৃহস্পতিবারই সৃষ্টি হবে, আগামী নভেম্বরেই সৃষ্টি হবে বা আগামী ২০১৮ সালেই সৃষ্টি হবে আমি এমনটি কোনো মতেই বলছি না। আমি বলতে চাচ্ছি, এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সচেতন জনগণের পক্ষ থেকে, বুদ্ধিবৃত্তির জগতে, রাজনীতির জগতে, নিরাপত্তার জগতে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।

প্রয়োজনীয়তা : বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে। আমরা অবশ্যই চাই, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিপূর্ণ থাকুক। আমরা অবশ্যই চাই বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক, পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণ ও গতিশীল জীবনযাপন করুক। বাংলাদেশ যেমন আমার, তেমনি বাংলাদেশ আপনারও, সবার। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর আবাল-বৃদ্ধ মানুষের জন্মভূমি ও মাতৃভূমি এই বাংলাদেশ। সুতরাং বাঙালি এবং পাহাড়ি সবাই মিলেমিশে পাহাড়ে থাকবেন এটাই লক্ষ্য।

লেখক : মেজর জেনারেল (অব:); চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

No comments:

Post a Comment